স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ এবং আজকের বাংলাদেশ
যখন ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনামলের সমাপ্তি ঘটে। তখন ভারতের মধ্যে দ্বিজাতি তত্ত্ব সফল হয়। আর এই সফলতার পরে পাকিস্তান নামের নতুন একটি রাষ্ট্রের সূচনা হয়। আর এই পাকিস্তান নামক নতুন রাষ্ট্র টি মূলত দুটি প্রদেশ নিয়ে গঠিত হয়ম একটি হলো পূর্ব পাকিস্তান এবং অন্য টি হলো পশ্চিম পাকিস্তান। তবে এই দুইটি প্রদেশ মিলে একটি দেশ হওয়ার পরেও। পশ্চিম পাকিস্তান সর্বদাই পূর্ব পাকিস্তানের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করে আসছিল। আর তাদের এই বিদ্বেষ মূলক আচরণ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ কোন ভাবেই মেনে নিতে পারেনি। সে কারণে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ কে নিজের মাতৃভাষার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছে। সেই সাথে নিজের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করতে হয়েছে। আর আজকে আমি আপনাকে সেই যুদ্ধের ইতিহাস গুলো সম্পর্কে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব। যদি আপনি আজকের পুরো আর্টিকেল টি পড়েন। তাহলে আপনি ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। এবং আজকের বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে পারবেন।
Table of Contents
‘৫২ এর ভাষা আন্দোলন
আমাদের বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন গোটা বিশ্বের মানুষ কে অবাক করে দিয়েছে। কেননা এই বিশ্বে এখন পর্যন্ত নিজের মাতৃভাষার জন্য এত বেশি প্রাণ ত্যাগ করতে পারেনি। যত বেশি প্রাণ ত্যাগ করেছে আমাদের বাংলাদেশের বীর বাঙালিরা। ইতিহাস থেকে জানা যায়, যখন ১৯৪৭ সালের ব্রিটিশ শাসন এর সমাপ্তি ঘটে। তখন ভারত বিভক্ত হয়ে নতুন একটি রাষ্ট্রের জন্ম দেয়। এবং সেই রাষ্ট্রের নাম হয়, পাকিস্তান। তবে ব্রিটিশ শাসনামলের সমাপ্তি হওয়ার পরে এই পাকিস্তান রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা কি হবে। সেটা নিয়ে অনেক জল্পনা কল্পনা চলতে থাকে। আর সেই সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের যে সকল রাজনৈতিক নেতা এবং বুদ্ধি জীবীরা ছিল। তারা সবাই সিদ্ধান্ত নেয় যে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। এবং এই দেশে বসবাসকারী সকল নাগরিক উর্দু ভাষা তে কথা বলবে। তবে এই প্রস্তাবে সেই সময়ে সবাই রাজি হতে পারেনি। বরং উক্ত সময়ে পাকিস্তানের যে সকল কেন্দ্রীয় সরকার ছিল। তারা উর্দু ভাষা কে নয় বরং বাংলা ভাষা কে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়েছিল।
কিন্তু সেই সময়ে পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতারা কোনো ভাবেই বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করতে চাইছিল না। সেই কারণে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থাৎ বাংলাদেশে থাকা সকল স্তরের মানুষ এর প্রতি তীব্র প্রতিবাদ এবং আন্দোলন শুরু করে দেয়। বলা বাহুল্য যে, সেই সময়ে বাংলা ভাষা কে রাষ্ট্র ভাষা করার জন্য ছাত্রসমাজ গণ আন্দোলন শুরু করে দেয়। যার ফলে ১৯৪৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর মধ্যে বিরাট একটি ছাত্র সভার আয়োজন করা হয়েছিল। যেখানে সবাই উর্দু ভাষা কে রাষ্ট্রভাষা না করার প্রস্তাব নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। কেননা সেই সময়ে পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যা ছিল 6 কোটি 90 লক্ষ। আর তাদের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিল 4 কোটি 40 লক্ষ। কিন্তু এরপরেও পশ্চিম পাকিস্তান উর্দু ভাষা কে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ কোন ভাবেই উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে মেনে নিতে পারছিল না। সে কারণে তৎকালীন সময়ের পূর্ব পাকিস্তানের সকল ছাত্র সংগঠন রাস্তায় নেমে তীব্র আন্দোলন শুরু করে দেয়। সেই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিরাট একটি মিছিল বের হয়। কিন্তু সেই মিছিল টি একটু দূরে যেতে না যেতেই পুলিশ তাদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালায়। কেননা তারা ছাত্রদের সেই মিছিলের উপর লাঠিচার্জ সহ অমানবিক গুলি বর্ষন চালায়। এতে করে সেই মিছিলে থাকা অনেক ছাত্র এবং শিক্ষক আহত এবং নিহত হয়। আমরা জানি যে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার সহ আরো অনেকে ভাষার জন্য জীবন দিয়েছিল। মূলত তারা এই পুলিশের নির্মম অত্যাচার এবং গুলিতেই শহীদ হয়। যাদের স্মরণ আমরা আজ পর্যন্ত করে আসছি। তবে ১৯৫২ সালে এই নির্মম অত্যাচার চালানোর পরেও এই ভাষা আন্দোলন শেষ হয়নি। বরং নিজের বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলন ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
একজন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা ভালো করে জানি যে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস হল আমাদের দেশের জন্য এক ধরনের শ্রেষ্ঠতম অধ্যায়। কেননা এই অধ্যায়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশ কে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে গোটা পৃথিবীর বুকে নাম লেখাতে পেরেছি। সেই সাথে বিশ্বের মানচিত্রে নতুন একটি ভূখণ্ডের সূচনা করতে পেরেছি। তবে এই স্বাধীনতা এত সহজে আসে নি। বরং সে স্বাধীনতার জন্য অনেক ত্যাগ অনেক প্রাণ বিসর্জনের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা কে অর্জন করতে পেরেছি। চলুন এবার তাহলে 1971 এর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে একটু আলোচনা করা যাক। যাতে করে আমরা সেই ইতিহাস কে পুনরায় আরেকবার স্মরণ করতে পারি।
যখন ব্রিটিশ শাসনামলের পরবর্তী সময়ে ভারত বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান নামক নতুন একটি রাষ্ট্রের সূচনা হয়। তখন এই রাষ্ট্র মূলত দুইটি প্রদেশ নিয়ে গঠিত হয়। তার মধ্যে একটি পূর্ব পাকিস্তান এবং অন্য টি পশ্চিম পাকিস্তান নামে পরিচিত হয়। কিন্তু এই দুইটি প্রদেশ মিলে একটি রাষ্ট্র হওয়ার পরেও। পশ্চিম পাকিস্তান সর্বদাই পূর্ব পাকিস্তানের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধিতা করেছিল। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। কেননা যখন নতুন রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান এর সূচনা হয়। তখন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয় যে, উর্দু কে রাষ্ট্রভাষা করা হবে। কিন্তু বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের সংখ্যা বেশি হলেও কেন উর্দু ভাষা কে রাষ্ট্রভাষা করা হবে। এ নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে থাকা মানুষরা তীব্র আন্দোলন এবং প্রতিবাদ করে। যার ফলশ্রুতি তে নিজের মাতৃভাষা কে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য জীবন দিতে হয়েছে অনেক নিরীহ বাঙালি কে। যার ফলে প্রতি বছর এর একুশে ফেব্রুয়ারি এই দিনটি কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে।
তবে শুধুমাত্র ভাষার ক্ষেত্রেই বৈষম্য ছিল না। বরং আরো অন্যান্য দিক থেকেও পূর্ব পাকিস্তানের চাইতে পশ্চিম পাকিস্তান অনেক বেশি সুবিধা ভোগ করতো। আর এই বৈষম্য গুলো যখন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ বুঝতে পারে। তখন তারা পশ্চিম পাকিস্তানে থাকা রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু করে দেয়। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের সূচনা হয়। এবং ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন এর সূচনা ঘটে। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন। তারপরে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১৯৬৯ সালের গণ আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস ধরে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। আমরা আজকের এই স্বাধীন বাংলাদেশ কে পেয়েছি। আর এই মুক্তিযুদ্ধের বিনিময়ে গোটা বিশ্বের মানচিত্রে নতুন একটি ভূখণ্ডের সৃষ্টি করতে পেরেছি। যে ভূখণ্ডের নাম হলো, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
স্বাধীনতা এবং আজকের বাংলাদেশ
প্রবাদে আছে, “স্বাধীনতা অর্জন করার চেয়ে রক্ষা করা কঠিন”। আর এই বিষয় টি বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পারা যায়। যখন আপনি আমাদের বাংলাদেশের দিকে তাকাবেন। ভাষা শহীদ থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের জীবন কে বাজি রেখে যুদ্ধ করা মুক্তিযোদ্ধারাম যেন আজকে শুধুমাত্র একটি গল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। কেননা আজকের দিনের তরুণ প্রজন্ম কোন ভাবেই সেই মুক্তিযুদ্ধের ত্যাগ এবং শহীদদের সঠিক মূল্য দিতে পারছে না। এইতো সেদিন দেখলাম ২১ শে ফেব্রুয়ারির ভাষা শহীদদের স্মরণ করার জন্য। তরুণ প্রজন্মের অনেকেই হিন্দি আর ইংলিশ গান বাজিয়ে উদযাপন করছে। বিষয় টা সত্যিই খুব অবাক করার মত তাইনা!
আর সময় যত অতিবাহিত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ যেনো শুধুমাত্র একটি শব্দ হয়ে বেঁচে থাকছে। তবে এমনটা কখনোই কাম্য নয়। বরং এই দেশকে স্বাধীন করার পেছনে যে মানুষ গুলোর আপ্রাণ চেষ্টা ছিল। তাদের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের সবার জ্ঞান থাকা উচিত। তাদের কে সঠিক মূল্য দেওয়া উচিত। তাহলেই মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া নিরীহ বাঙ্গালীদের আত্মা শান্তি ভাবে। নতুবা স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাদ গ্রহণ করার পরেও মুক্তিযুদ্ধ শুধুমাত্র গল্পের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।